০১৭১৩৮১৫৬৭৮

**প্রাথমিক শিক্ষার প্রসার ও উচ্চ শিক্ষার প্রয়াস **

১৯৯৩ সালে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা চালু হওয়ার ফলে প্রাথমিক স্তর সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং এই উদ্যম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরেও ছড়িয়ে পড়ে। গণসচেতনতা নিঃসন্দেহে এটিকে আরও গতিশীল করে তোলে।

গ্রামীণ বাংলাদেশের প্রায় ৮০% মানুষের জীবনধারা কৃষি-নির্ভর। বাকি লোকেরা তাদের সামাজিক অবস্থানের কারণে পেশাগতভাবে ব্যবসা-নির্ভর। ফলে, শহরাঞ্চলের শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক বা মাধ্যমিক স্তর অতিক্রম করার পরই অনেককেই পারিবারিক পেশায় জড়িয়ে পড়তে হয়। যদিও তুলনামূলকভাবে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ তাদের নাগালের মধ্যে বেশি প্রসারিত থাকে, তবে গ্রামীণ জীবনধারা থেকে বেরিয়ে আসা শিক্ষার্থীরাই এই সুযোগটি বেশি ভোগ করে।

তবে, সাম্প্রতিককালে কঠিন প্রতিযোগিতার কারণে শহরাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের তুলনায় গ্রামীণ পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা ক্রমবর্ধমান আর্থিক টানাপোড়ন এবং অন্যান্য কারণে ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছে। পিছিয়ে পড়ার মানসিকতা, সামাজিক অনগ্রসরতা, উপলব্ধির দুর্বলতা এবং নেতৃত্বের সংকট এই কারণগুলির জন্য দায়ী।

উপরোক্ত বিষয়গুলি ছাতকের দক্ষিণ জনপদের কিছু সমাজহিতৈষী উদ্যোক্তাকে গভীরভাবে চিন্তিত করে। তাদের মনে শিক্ষা সম্পর্কিত একটি ইতিবাচক উন্নতির লক্ষ্যে কিছু করার প্রবল আকাঙ্ক্ষা জাগে।

এই লক্ষ্যে, ছাতক থানার দক্ষিণ জনপদের লোকেরা বারবার বৈঠকে বসে সামগ্রিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে সিদ্ধান্ত নেয় যে, অন্তত এই এলাকায় শিক্ষা প্রসারের জন্য একটি কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। শুধু তাই নয়, প্রাথমিক প্রকল্প হিসাবে এই এলাকার কোনও উপযুক্ত স্থানে একটি উচ্চ মাধ্যমিক মহাবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সাহসী সিদ্ধান্তও তাঁরা নেন।

এভাবেই সবার আন্তরিকতার ফলে একটি হৃদয়গ্রাহী সংগঠনের ভিত্তি রচিত হয়। ফলস্বরূপ, গ্রামীণ শিক্ষা প্রসার সংস্থা (SAVE) এর মাধ্যমে প্রস্তাবিত জনতা মহাবিদ্যালয়ের কার্যক্রম দিন-দিন এগিয়ে যেতে থাকে।

প্রস্তাবিত কলেজের জন্য কমপক্ষে ৩ একর জমি সংগ্রহ ও নির্বাচন করার জন্য জোরালো ভূমিকা পালন করা হয়। এরপর, ৮/১১/১৯৯৪ তারিখে ছাতক এস, আর, কার্যালয়ে ভূমির মালিকরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে ভূমি নিবন্ধন করেন এবং আরও ভূমি সংগ্রহের বিষয়টি বিবেচনায় রাখেন।

১৮ সেপ্টেম্বর ১৯৯৪ সাল থেকে কলেজ প্রতিষ্ঠার বিষয়ে অত্র এলাকার লোকদের মধ্যে বারবার সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছিল। এই সভাগুলির মাধ্যমে নিজ এলাকার মাধ্যমিক উত্তীর্ণ ছাত্র-ছাত্রীদের প্রস্তাবিত জনতা মহাবিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার লক্ষ্যে অপেক্ষা করার জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছিল। শেষের দিকে, সম্ভাব্য ভর্তিচ্ছুদের একটি তালিকাও প্রস্তুত করা হয়। কিন্তু কলেজ প্রতিষ্ঠার অনুমতি যখন পাওয়া যায়, তখন যথেষ্ট দেরি হয়ে যায়। তালিকাভুক্ত শিক্ষার্থীদের অনেকেই আর অপেক্ষা করেনি। ফলে, প্রথম বছরে ছাত্র-ছাত্রীদের মোট সংখ্যা ৩৩ অতিক্রম করেনি। তবে, পরবর্তী শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ সবাইকে আশ্বস্ত করেছে। এজন্য সংশ্লিষ্ট অভিভাবক মহলের অর্থপূর্ণ সহযোগিতা ছিল উল্লেখযোগ্য।

৪ নভেম্বর ১৯৯৪ তারিখের সভার কার্যসূচি অনুযায়ী এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মাধ্যমে একটি তহবিল গঠনের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এই দিনই নগদ এবং প্রতিশ্রুতি মিলিয়ে মোট ৩,৬৫,০০০/= (তিন লক্ষ পয়ষট্টি হাজার) টাকার তহবিল সংগঠিত হয়। ৭ নভেম্বর ১৯৯৪ তারিখে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, মঈনপুর বাজার শাখায় জনতা মহাবিদ্যালয়ের নামে ৫০,০০০/= পঞ্চাশ হাজার টাকার স্থায়ী আমানত হিসাবে জমা করা হয়।

সামাজিক নেতৃত্বে প্রবল মতপার্থক্য থাকা সত্ত্বেও 'জনতা মহাবিদ্যালয়' বাস্তবায়ন সংক্রান্ত সংগঠন 'গ্রামীণ শিক্ষা প্রসার সংস্থা'র মহাসচিব জনাব একরাম উদ্দিন আহমদ এবং জনাব আব্দুল মুমিন মাসুক মিয়া (দোলার বাজার ইউনিয়নের তৎকালীন চেয়ারম্যান) এর স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে সকল কর্ম-প্রক্রিয়া অনেকখানি সহজ এবং গতিশীল হয়ে ওঠে।

উল্লেখ্য যে, কলেজ প্রতিষ্ঠার সময় সর্বজনাব ওয়ারিছ আলী, জনাব হাজী মো. আফরোজ মিয়া, মঈনপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জনাব ফজলুল হক, হাজী মহরম আলী, জনাব ফেরদৌস আলী, বড়চাল নিবাসী জনাব নোয়াব মিয়া মজুদমার, বরাটুকার জনাব পীর আব্দুল হান্নান, ছৈলার জনাব আব্দুল হক, জনাব ছাইম উল্লা, জনাব হারুন মিয়া প্রমুখ মহৎপ্রাণ ব্যক্তিবর্গ সহ অগণিত শিক্ষানুরাগী শুভানুধ্যায়ীর দরাজ হস্ত সম্প্রসারিত না হলে এই প্রতিষ্ঠানটি হয়তো গড়ে উঠতে পারত না। এছাড়াও, অধ্যক্ষ জনাব আখলাকুর রহমানের ব্যক্তিগত ত্যাগ এবং কর্মচঞ্চল পদচারণা গোটা আয়োজনকে সহজসাধ্য করে তোলে।

পরবর্তীকালে, যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের বদান্যতায় কলেজ প্রতিষ্ঠার দুরূহ এবং ব্যয়বহুল কার্যক্রম সফলতার সাথে দ্রুত এগিয়ে যায়। CDP গ্রুপের প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতা একটি ব্যতিক্রমী প্রচেষ্টা হিসাবে সবার মনোযোগ আকর্ষণ করে।

জনতা মহাবিদ্যালয় আজ উচ্চ শিক্ষার পীঠস্থান হিসাবে সগৌরবে আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে। এই আলোর ঘরের বাস্তব রূপায়ণে যাদের ত্যাগ স্বীকার্য, তাঁরা যুগে যুগে স্মরণীয় হবেন। নতুন প্রজন্ম তাঁদের মহৎপ্রাণ পূর্বপুরুষ দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে উজ্জ্বল, সুন্দর এবং পরিশীলিত সমাজ গঠনে অবদান রাখবে। এই প্রত্যাশা আজ এবং আগামী প্রজন্মের কাছে।

 

তথ্যসূত্র

০১. পদক্ষেপ: ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন স্মারক প্রকাশনা

০২. পদক্ষেপ: বিজয়ের রজত জয়ন্তী স্মারক প্রকাশনা-৯৬

০৩. প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ মরহুম মোহাম্মদ আখলাকুর রহমান এর প্রাসঙ্গিক লেখনি